[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৩ মাঘ ১৪৩১

নরসিংদীর অপরাধ জগতের সম্রাট হাসানুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ২১:৩১

ফাইল ছবি

নরসিংদী জেলা যুবদলের সেক্রেটারি হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে এলাকায় লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ১২০টি বাড়িতে এই তাণ্ডব চালানো হয়।

 অগ্নি সংযোগের আগে ট্রাক ভরে মালামাল লুট করার পরে বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে, এলাকাটি যেন মৃত্যুপুরী। এসব বাড়িতে কোন লোকজন নাই, শুধু ভিটেমাটি পড়ে আছে। লুটের হাত থেকে রেহাই পায়নি গরু-ছাগলও।

মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কিছু কিছু গরু-ছাগল তার মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারছেন না তাদেরটা বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন এই যুবদলের নেতা। ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন, যুবদল নেতা হাসানুজ্জামান গত ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার লুটপাট চালিয়েছেন। অভিযোগ আছে- জাতিতাবাদী যুবদলের রাজনীতিতে নাম থাকলেও গত ১৫ বছরে তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এলাকায় একছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি আন্তর্জাতিক ডাকাত দলের প্রধান কেবল ডাকাতের সহযোগিতায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করেছেন। 

জেলার এসপি, ডিসি আমার কাছে নিরাপত্তা চেয়ে  ফোন করছে। আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। প্রায় ১৭ মিনিটের অডিও রেকর্ডটি আমাদের হাতে এসেছে। শুধু তাই নয়, হাসানুজ্জামান এর সহযোগী ফরহাদের মাধ্যমে মুক্তিপণ দিয়ে গরু মালিকেরা তাদের গরু ছাগল ছাড়িয়ে আনারও একটি ভিডিও ক্লিপ শেষবেলার হাতে এসেছে।স্থানীয় আওয়ামীলীগের কর্মী সজীব সরকার জানান, নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানাধীন চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের এক আতংকের নাম জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান। তার নানা অনিয়ম, দখল চাঁদাবাজী, আগুন সস্ত্রাস, গুরু-ছাগল লুট, মহিলাদের স্বর্নালংকার ও নগদ টাকা সবকিছুই লুটে নেয়া তার যেন নিত্যদিনের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকার সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। চাঁদা দেয়ার ভয়ে অনেক লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে একাধিক গ্রামের বিভিন্ন সাধারন মানষের বাড়ি-ঘরে লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ চালিয়েছেন। 

গত ১৫ বছরে পুরোদমে আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। বর্তমানে চর আড়ালিয়া ইউপির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন তার স্ত্রী। হাসানুজ্জামান সম্পর্কে জানতে চাইলে একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার জানান, গোটা নরসিংদী জেলার মানুষ হাসানুজ্জামানের ভয়ে সবসময় তটস্থ থাকে। এহেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নেই যে, যা তিনি করেননি। এলাকার লোকজনের সাথে কথা বললেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদী জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক হাসানুজ্জামান স্কুল জীবন থেকে নানা অনিয়ম, সস্ত্রাসী কার্যকলাপ, অস্ত্রবাজী, ডাকাতিসহ নানা ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের মাঝে ভয়ভিতি সৃষ্টি করে আসছে। 

তার সস্ত্রাসী মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেতে থাকে যে ১৯৯৪ সালে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চার বারের সংসদ সদস্য ও নরসিংদী জেলা বিএনপির আ-মৃত্যু সভাপতি মরহুম সামসুদ্দিন আহমেদ এর ছেলে মাসুদ আহমেদকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এঘটনায় হাসানুজ্জামানের যাবৎজীবন সাজা হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর আইনের ফাক-ফোকর দিয়ে ২০০৪ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় গঠন করেন সস্ত্রাসী ও ডাকাত বাহিনী।  বাহিনী প্রধান হন তিনি নিজেই। তার সেকেন্ড ইন কমান্ডের দায়িত্ব দেয়া হয় আন্তর্জাতিক ডাকাত দলের সদস্য কেবলকে । এই কেবলকে দিয়েই গোটা নরসিংদী জেলায় একছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন তিনি।

পরবীর্ততে ২০০৫ সালে সাবেক এমপি সামসুদ্দিন আহমেদ এছাক্#৩৯;র মৃত্যুর পর নরসিংদী সদর আসনে উপনির্বাচনে ডাকসুর সাবেক জি.এস বর্তমানে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্মমহাসচিব খাইরুল কবির খোকন নির্বাচিত হলে তার ছায়াতলে আশ্রয় নেন চতুর হাসানুজ্জামান। আস্তে আস্তে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।

জেলা পরিষদ, এলজিআরডি ভবন, রোডস এন্ড হাইওয়েসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন অফিস আদালতে তার চাঁদাবাজী বাড়তেই থাকে। এক পর্যায়ে হাসানুজ্জামান জেলা ছাত্র দলের সভাপতি হওয়ার জন্য জনাব খাইরুল কবির খোকনকে তার সস্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়িত চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তুু খাইরুল কবির খোকন হাসানুজ্জামানের খুন, চাঁদাবাজী, ডাকাতি ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তার সেই আশা আলোর মুখ দেখেনি। এঘটনার পর থেকে হাসানুজ্জামান খাইরুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। 

সখ্যতা গড়ে তোলেন ততকালীন আওয়ামী লীগের মেয়র লোকমান হোসেনের সাথে। চলতে থাকে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এমনকি লোকমান হোসেনের মৃত্যুর পর তার ভাই মেয়র কামরুজ্জামানের সাথে একই ভাবে সখ্যতা গড়ে তোলেন এই যুবদল নেতা । অভিযোগ আছে, পরবর্তিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের পিএস’র মধ্যস্থতায় এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশ্রাফ উদ্দিন বুকুল’র অনেতিক লেনদেনের মাধ্যমে নরসিংদী জেলা যুব দলের সাধারন সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।

 কিন্তু, জেলা যুব দলের সাধারন সম্পাদক হয়েও আওয়ামী ঘরোনার রাজনীতিবিদের সাথে সখ্যতারকমতি ছিলনা এই যুবদল নেতার। এছাড়াও তিনি নামে যুবদলের সাধারন সম্পাদক হলেও কর্মকান্ড ছিলো আওয়ামী ঘরোনার নেতাদের সাথে। এরমধ্যে মেয়র লোকমান হোসেন, কামরুজ্জামান, রায়পুরা উপজেলা আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূঁইয়া ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মো. নাসিম এর পিএস এবিএম রিয়াজুল করিম কাওছারসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে তার দহরমমহরম সম্পর্ক ছিলো, যা অস্বীকার করা যাবে না। 

তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত নানান সুযোগ সুবিদা ভোগ করতেন এই যুব দলের সাধারণ সম্পাদক। এবিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যগ্মমহাসচিব এ্যাডভোকেট রহুল কবির রিজভী বলেন, দলের শৃঙ্খলাবর্হিভ’ত কর্মকান্ডে যারা জড়িত হবেন, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।

এমএএন

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর